Thursday, July 15, 2010

তুষার গায়েনের কবিতা








মেঘ ঈশান নৈঋতকোণে



গাঢ় রাত, শোঁ শোঁ শব্দ ... ...

মাঠের এ-আল থেকে ও-আল, ও-আল থেকে হেঁটে গেলে দূরে, ও..ই দূরে
যেখানে একটি তালগাছ--একটি গাঁয়ের শুরু, ঝিঁঝির কোরাস দীর্ঘ
কুহকী পাখির ডাক, বাদুড়ের ডানা ঝাপটানো শব্দ একাকার করে
মোচড়ে মোচড়ে উঠে আসে হাওয়ার গোঙানি শুধু
তালগাছের মাথার 'পর ছোপ ছোপ কালো মেঘ ... ...

ওরে ঐ মেঘ করেছে--বৃষ্টি হবে!

এক ব্যাপ্ত উল্লাসে ঘুমের পাথার ভেঙে জেগে ওঠে কেশব
ঘরের দাওয়ায় দেখে মাতাল আকাশ তেজী মেঘ হাওয়ার সংঘর্ষে ঘনীভূত, কী
দ্রুত মিশে যেতে থাকে কলার উচ্ছ্বল ঝাড়ে
দূ..র গাঁয়ে বৃষ্টির গর্জন, শোঁ শোঁ শব্দ ...

ওই শব্দে ঘোরে ফেরে হাজার আকুতি যত স্বপ্ন সাধ :

প্রচণ্ড খরায় গেছে বৃথা ওই চৈত্র ও বৈশাখ--যাক এবার বৃষ্টিটা হলে হয়!
ক্ষুধার আদিম আয়োজনে ফুঁসে ওঠে হাতে পেশী, পায়ে শিরা
দেহে কাদাজল বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুখে হাসি স্বস্তির নিঃশ্বাস
এবারে ফসল হবে ... কুসুমের জন্য লালপেড়ে একখান শাড়ী, আনকোরা ঘ্রাণ
নবান্নের উৎসব, ধানকাটা মাঠে যাত্রা, কবিগান, ধূয়া জারী সারী
এবারে বৃষ্টিটা হলে হয়!

দূর গাঁয়ে ততক্ষণে বৃষ্টি হয়ে গেছে।

ভারী শব্দে ওই জোর বৃষ্টি উড়ে আসে এইবার
তালবনে আধিভূত অন্ধকারে একবার ঝপ ঝপ ঝরে পড়ে
ঝাপসা করে চলে যায় গাঁয়ের ওপ্রান্ত থেকে এপ্রান্ত, এপ্রান্ত থেকে
আরো দূর প্রান্তপুর সকল সীমান্ত ছুঁয়ে ওগরানো পোড়ামাঠ
চাপ চাপ মাটি ঘাস, অগণিত আলের বিরোধ ধুয়ে যায় একবার
সে'তো শুধু একবার ... ...
তারপর উড়ে যায় দূরে, কোন অভিশপ্ত জনপদ, বিরাণ প্রান্তরে

হায় বৃষ্টি!

আবেশে উল্লাসে সারারাত ঝরে যাবে বলে
ভিজে ভিজে মাটি এই কুমারী দেহের মত কম্পিত হবে বলে
পেশল বাহুতে লাঙলের উদ্দাম উৎসব শুরু হবে বলে
মধ্যরাতে গহীন আঁধারে চেয়ে থাকা ... ...

হাওয়ায় হাওয়ায় কাপুরুষ কালো মেঘ সরে আসে
প্রতারক হাসি হেসে ওঠে চাঁদ, শুধু
শুয়ে থাকে নীচে বন্ধ্যা নারী এক এপাশ ওপাশ ফেরে।


*কবি পরিচিতি
তুষার গায়েন : কবি, প্রাবন্ধিক। আর্কিটেক্ট। জন্ম ১৯৬৭।

No comments:

Post a Comment