Thursday, July 15, 2010

ঋষিকাপত্র. ১















শ্রাবণের কবিতা

ঋষিকাপত্র


সাহিত্যপত্র।
সংখ্যা : এক। শ্রাবণ ১, ১৪১৭ বঙ্গাব্দ।
সম্পাদক : মৌসুমী কাদের।
প্রকাশক : কুলদা রায়।


..........................................................
ফেসবুকে ঋষিকাপত্রের লিংক
..........................................................










সম্পাদকীয়

আজ বৃষ্টি ঝরছে। শুনছি, শাওনগগণে ঘোর ঘনঘটা। কণিকা কিন্নর কণ্ঠে গাইছেন। রাত্রি নয়--নিশীথ নেমে এসেছে। বজ্রবিদ্যুতের মধ্যে দিয়ে রাধা চলেছেন বনপথে। গাছপালা লটিয়ে আছে। প্রবল হাওয়ায় যমুনা ফুঁসে উঠেছে। কোথাও বাজছে বাঁশি। আর ঝরছে যুথিগন্ধ বৃষ্টি।
এই ছবিটি আমার শ্রাবণের। তবু শ্রাবণদিন চলে যায়। কেবল তার ছায়া পড়ে থাকে মনে--বনে।

এরকম শ্রাবণ নিয়ে কবিতা লিখেছেন ছয়জন কবি। প্রতিটি কবিতায়ই ভীন্নস্বর বাজে। শব্দের গায়ে মেঘ জমে। বৃষ্টি নামে।

আসুন, কবিতাশ্রাবণে ভিজি।


সূচিপত্র :

১. খোন্দকার আশরাফ হোসেন : ঘোর বর্ষা
২. ওবায়েদ আকাশ : ধীরেন্দ্র আর ভুশার নস্টালজিয়া, মুখর এলাহি কাল
৩. আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ : ছাতার নিচে-এক, ছাতার নিচে- দুই
৪. সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ : বৈরিক পত্রাবলি
৫. হিন্দোল ভট্টাচার্য : শ্রাবণভাষা
৬. তুষার গায়েন : মেঘ ঈশান নৈঋতকোণে

খোন্দকার আশরাফ হোসেনের কবিতা









ঘোর বর্ষা



বৃষ্টির ছাতা মাথায় নিয়ে নির্দ্বিধায় নেমে পড়ি রাস্তায়।
আর কোনো ভয় নেই, ভয়ের ডরটা পেরুতে পারলে।
অঝোর ধারাবর্ষণ এসে মুক্ত করে দিয়ে গেল আমাকে―
আহ্ শান্তি, আকাশজোড়া মুগ্ধ মানকচুর ছড়ানো পাতাটা
আমাকে রক্ষা করছে বৃষ্টিময়তার মধ্যে, ভিজিয়ে দিয়ে।

যে-মেয়েটি ট্রাফিক সিগন্যালে ফুল বেচে, ভিজছে সে-ও,
তার হাতে ধরা গোলাপের গোছা দুটো জল খেয়ে সতেজ;
এই তুমুল বৃষ্টির মধ্যে কেউ গাড়ির কাচ খুলবে না জেনেও
এসে দাঁড়াচ্ছে থেমে-যাওয়া গাড়ির পাশে, অভ্যাসমাফিক।

জল দাঁড়ায়ে গেছে টাকনু তক, পানির হালট ভেঙে ওপারে
হেঁটে গেলেন পাজামা-গোটানো এক মৌলবী সাহেব।
কালস্রোতে ভেসে যাওয়া ধনমান লক্ষ করে বিষণ্ন এক পাগল
ভেজা কাকের সাথে অঝোরে ভিজতে থাকে চৌমাথায়।

রমনার গাছগুলো শতাব্দীর ঘুম-ভাঙা কলহে মেতেছে
বাবড়ি চুলের সাথে দীর্ঘ কেশদাম লুটোপুটি হাওয়ায় হাওয়ায়
ঝরাপাতা সাঁতার কাটছে তেলাপিয়া মাছ, প্রেমপত্র,
পরিত্যক্ত ঠোঙার সাথে জীবনের শেষ চিকিৎসার হ্যান্ডবিল ।

এত প্রাণ এত দু:খ এত নিরাভরণ দীনতা ও ক্ষুধা
সব ঐ নিরন্ধ্র বৃষ্টির মধ্যে মনে হয় হারিয়েছে ধার
সবকিছু ক্লান্তির অপর পারে আবছায়া ধূসরতা মৃত্যুমলিনতা
ঢেকে রাখে ক্রোধ, প্রেম, অহোরাত্র কলহের মানকচুপাতা।



ঘন বর্ষার দিনে কাচারিঘরের মধ্যে নানান দৃশ্যের জন্ম,
বাঁশের চাঙারি বানাচ্ছে কেউ, ফুটে উঠছে ডেভিডের তারা চাচড়ের ক্রসবুনোটে
কোন এক নাজেহাল শহর ভ্রমণের গল্প বলছে হাতফেরতা হুঁকা
সেবার মাছের ঝাঁক উঠে এসেছিল আউশের ক্ষেতজুড়ে খণ্ডকালীন মাছুড়েরা বলে
টেটা বল্লম হাতে ওয়াটারলু’ যুদ্ধের স্মৃতি কয়েকজন প্রাক্তন সেনার।

এদিকে হৈ হৈ পাঁচটি কিশোর বাতাবিনেবুর ওয়ার্লডকাপে
কাকেরা ভেজা ডালের মোরাকেবায় প্রসন্ন, কেউ কেউ হীনযানী অতন্দ্রচাক্ষুষ
কাদার ভেতর থেকে উজানি কৈয়ের হৃদি করতলে ধরে যেন বুদ্ধের যৌতুক।

ঘনবর্ষার দিনে তাসের আসরে সব টুয়েন্টি-নাইন -রঙ কল্পনার ধনু
আছাড়ি-পিছাড়ি যায় কিষাণীর জলভেজা কষ্ট শাড়ি নিঙাড়ি নিঙাড়ি।

কারো-কারো মনে পড়ে কে যেন পদ্মার বোটে ভেসেছিল দূরদেশি বাবু
দেখেছিল ছাতিমের উদার পাতার নিচে ভিজছে পিতৃগৃহষ্ণেু নায়রী
এবার হলো না গান সাজাদপুরের হাটে বিষয়ীরা ডুবিয়েছে নাও
বেহদ্দ পানির দরে পাট বেচে ঘরে ফেরে উদাস লালন ।

৩.

আকাশের জলকরঙ্কবাহীরা সারি সারি দাঁড়ায়ে গিয়েছে
আর ঢালছে তাদের কুম্ভ থেকে জল,
নিচে মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি, ধানক্ষেত, পালানের নামিলা মরিচ
ভেসে যাচ্ছে পানিয়া ভরনে নদীতীর উথালিপাথালি যায়
বাইচের নৌকা আর কলার ভেলার চলে সমতুল নওরোজ, ফেটিবাঁধা
গায়েনের দোহার ধরেছে মালকোচা পরনে কিশোর
কচুরিপানার ঘূর্ণি ঢোঁড়াসাপের হৃদয় কাড়িছে
হেঁকে যায় বজ্রের চাবুক হাতে তুড়–ক সওয়ার
জলের সিন্ধুক খুলে কী কী রত্ন পাওয়া যায় দেখে নেয় জেলে
উপরে টিনের বাদ্য ঝমাঝম বৃষ্টির নাচুনি
থামালে কত্থক নাচ একটুখানি টুসকি দেয়ে সোনার ছেলেরা



কবি পরিচিতি
খোন্দকার আশরাফ হোসেন : কবি প্রবন্ধকার ও সম্পাদক--একবিংশ। প্রফেসর, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ওবায়েদ আকাশের কবিতা















ধীরেন্দ্র আর ভুশার নস্টালজিয়া



‘ধিরে, সুখ নাই।’

[ভুশার একমাত্র ঘোড়াটি গতরাতে চুরি হয়ে গেছে।
কিংবা ধারণা করা যায়, এ মুষল বৃষ্টিতে ঘোড়াটির
দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়।]

‘কেন?’ --বলল ধীরেন্দ্র।

আবার ধীরেন্দ্র কয়, ‘তোর থেকে ত্রি-দন্ত চতুর কেউ
একজন ঘোড়াটির আজকাল খোঁজখবর নেয়।’

‘ধিরে, এখন কী করি?’

‘যত দূর জানা আছে, তার কিছু তথ্য বের করি।’

[তথ্যে বেরিয়ে পড়ে, এ ভরা শ্রাবণে, তিনিও ঘোড়ায়
চেপে হঠাৎই ছুটছেন নাকি সোমত্ত কৈশোরের দিনে।]

‘মাঝি, কোন ঘাটে ভিড়বে তোমার তরী?’

[নদীতীরে ধীরেন্দ্র আর ভুশা, তাদেরও শৈশবের দু’টি
টিকিট যদি মেলে!]


মাঝি বলে, ‘আপনারা ব্যাটা নাকি ছেলে?’

এ ওর দিকে চায়, তারপর ধীরেন্দ্র বলে--‘মুশকিলে
ভুশা, মাঝিও মনের কথা রঙ ধরিয়ে বলে।’



মুখর এলাহি কাল

একবার যখন ভালবাসতে শিখেছ, তেমাথার মোড়ে গাছগাছালির ভিড়ে নিঝুম বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে পড়ে দেখ-- ভালবাসা কেন বারবার বৃষ্টিতে ভিজে উঠতে চায়। থৈ থৈ বর্ষাকাল এলে চারিদিকে ভালবাসার চাষবাস যেমন বাড়ে, কণ্ঠে বিরহ তুলে কত নাইওর গ্রাম ছেড়ে ভিন গাঁয়ে যায়-- কত ঋষি কামার্ত হয় ভিজে!

পৌষ-মাঘে বৃষ্টি হলে তোমার আমার ভালবাসার দুর্ভোগ নেমে আসে-- যেভাবে আষাঢ়ে-শ্রাবণে-- তুমি আমি ফিরে পাই ছেলেবেলার স্মৃতি-- মুখর বর্ষণে। প্রতিদিন তোমার প্রতীক্ষায় যেমন থাকি, তেমনি অঝর বর্ষণের লোভে হাটুরের দলে ভিড়ে নদীর কিনারে বসে এটাওটা বিকিকিনি করি-- মাছবাজারে ঘুরি, বৃষ্টিতে লাফিয়ে-ওঠা খালুই ভর্তি মাছ কিনে ঘরে ফিরে অসি। যেহেতু আমার ভেতরে--পৃথিবীর তাবত বর্ষা মানেই দুর্দান্ত ছেলেবেলা, গাঁয়ের স্কুলমাঠে থৈ থৈ জলে ফুটবল নিয়ে খেলা। আজো অব্দি ভালবাসা মানেই যেমন বৃষ্টি বৃষ্টি এবং বৃষ্টি-- অন্যত্র বর্ষাকাল মানেই গুড়– গুড়– মেঘের গর্জনে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো-- মুখর এলাহি কাল


* কবি পরিচিতি
ওবায়েদ আকাশ : কবি, সম্পাদক--শালুক ও সাময়িকী বিভাগ, দৈনিক সংবাদ। জন্ম ১৯৭৩।

আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর কবিতা








ছাতার নিচে--এক

হাত ধরে আছি বাঁশপাতা কাপড়ের গম্বুজে
ধুম করে ঢুকে যাচ্ছে জলমর্মর পিচ্ছিল মাটিদেশ
নামছে মেঘপতনের আলো - আকাশের বিষ্ময়!
গুঁড়ি গুঁড়ি এই প্রীতিখণ্ড
বাতাস ধরে উঠছে কোন হিমালয়ে!

কালো মহিষের বেশে দৌড়াচ্ছে মানুষের ছায়া
পেছনে জড়ানো এই গ্রামদেশ কার বার্তা পাঠায়
কাকে জানায় অপহরণের ঘটনা?
নির্বিবাদী জলআক্রমণে শেষ হয় পাথরকুড়ানোর আশা
আর দূরে যাওয়ার যাতনা গলে যায়
এই ব্যাকুল মহিলার মৌসুমে।
নুয়ে আছি ছেলেদের লালবলে-
ভিজে যাওয়া গোলপোস্ট ধু ধু মাঠে,
নিজেকে হারাই- গোলাকার নিরাকার কক্ষপথে।

১২/০৭/২০১০


ছাতার নিচে-- দুই

ভাষার ব্যবহার ছোট হয়ে যায়
শরীরে জমে জলপাখি মেঘের পিঞ্জর
আসে প্রস্তরযুগ শিকারির ইশারা
দখল করছে কেউ
এই ব্রীজ পারাপার লেবুপাতার সংসার।

তরল পতনে নিজের পায়ে দাঁড়ানো দায়!
ধান দুর্বা ধুলি যাই দিই
আজ শুধু বিবতর্নের প্রাণ ছাড়া কিছুই নাই।
যদি সংশয়ে থাকো
তাহলে ছাতার ভেতরে আসো,
দেখে যাও নীলসবুজ সময়ের কামিজে
নীড়হারাদের ঠিকানা।

প্রতীক্ষার পালন শেষে জেগে উঠেছে মুহূর্ত
বৃষ্টি বৃষ্টি শাদা-সন্ত পায়রার দল দেবদূত
উড়ছে বাস স্টপ রেলের কামরায়।
নিহত সিপাহিদের দল
কালো কাপড়ে ঢেকে যায় রক্তপিপাসা।

১২/০৭/২০১০


কবি পরিচিতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ : কবি। শিক্ষক। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত। জন্ম : ১৯৬৫।

সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কবিতা








বৈরিক পত্রাবলি


(আমানউল্লাহ্, সোদরেষু)

বিষয় : Òবৃষ্টিÓ তথা তস্য উপমেয়

With beaded bubbles winking at the brim… (Keats)

প্রাক্কথন :
একদা আমানউল্লাহ্ 'বৃষ্টি' এই কথা উচ্চারিবামাত্র আমরা, অর্থাৎ বিষ্ণু বিশ্বাস, রতন দস্তিদার, সুরজিৎ দত্ত আর আমি এককাট্টা ভিজিবার উপক্রম করিতেই চণ্ডষণ্ডবৎ দৌড়িয়া আসিয়া যজ্ঞ পণ্ড করিল লুপিস...

ফুলচন্দন পড়ুক তোমার মুখে,
শিল্পী আমান! পৃথিবীর সব কবি
এ-উৎপ্রেক্ষা নিতই গোপনে টুকে :
বৃষ্টি - বৃষ্টি - বৃষ্টি - বৃষ্টি - অবি-
সংবাদী সুর, চরম - পরম ছবি!

শোণিতে মুক্তধারার মুক্তি-স্নান,
দেউলে-- দেউলে হঠাৎ আরতি-ধ্বনি!
হৃদয়ের মেঘ ঝঞ্ঝায় বেপমান,
ঊনপঞ্চাশ বাতাস ছত্রখান,
অকালবোধনে চরাচরে সিম্ফনি -

একটি পলকে ঢুকে গেল বারো মাস:
রমণীরও চেয়ে রমণীয় এই মণি!
এরই লাগি আমি ছেড়েছি হিরের খনি -
শির-দরিয়ার তলে - এই নটিলাস!
নাভির গভীরে জমাট নাভিশ্বাস!

Envoy :

আমান!
- জি?
শুনলাম ইদানীং ভালোই কামান?
- জি?
তাহলে চলুন ভিজি-
- আজ্ঞে
ওসব কি আর আছে মোদের ভাগ্যে...

(1991)



* কবি পরিচিতি
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ : কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, অনুবাদক। অন্যতম সম্পাদক--অগ্রবীজ। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত। জন্ম ১৯৬৫।

হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা









শ্রাবণভাষা


ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ, তোমাকে কীভাবে বলি
তোমার দিকেই আমি ক্রমশ শ্রাবণ!
শব্দে শব্দে মেঘ করে আসে...
ভিজে মাটির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
একবুক শ্বাস
আমার প্রেমের মত ওঠে নামে, শান্ত সোঁদা মাটির ভাষায়

২.
আকাশে কান্নার মুখ ভার
নিচু মেঘ জানে না সে কীভাবে আষাঢ়
যেমন আমার মন
যেমন তোমার মন
ভীষণ একাকী...

আকাশে কান্নার মুখ ভার

৩.
যাব না কোথাও, এই শহরে মেঘের তাবু থেকে...
বলব না আমাকে নাও
আলো যত কমে আসে, আমারও বয়স ক্লান্ত হয়
এস তুমি আমাকে ভেজাও
অনেক মৃত্যুর গল্পে পুনরুজ্জীবনের কথা থাকে
শ্রাবণ, ভাসাও
বৃষ্টির ফোঁটা নিচে বুড়ো পাতা শেষ কয়েকদিন
যেমন ছটফট করতে থাকে



*
হিন্দোল ভট্টাচার্য : কবি। সহসম্পাদক--থিয়েটার ম্যাগাজিন স্যাস,কোলকাতা। জন্ম ১৯৭৭।

তুষার গায়েনের কবিতা








মেঘ ঈশান নৈঋতকোণে



গাঢ় রাত, শোঁ শোঁ শব্দ ... ...

মাঠের এ-আল থেকে ও-আল, ও-আল থেকে হেঁটে গেলে দূরে, ও..ই দূরে
যেখানে একটি তালগাছ--একটি গাঁয়ের শুরু, ঝিঁঝির কোরাস দীর্ঘ
কুহকী পাখির ডাক, বাদুড়ের ডানা ঝাপটানো শব্দ একাকার করে
মোচড়ে মোচড়ে উঠে আসে হাওয়ার গোঙানি শুধু
তালগাছের মাথার 'পর ছোপ ছোপ কালো মেঘ ... ...

ওরে ঐ মেঘ করেছে--বৃষ্টি হবে!

এক ব্যাপ্ত উল্লাসে ঘুমের পাথার ভেঙে জেগে ওঠে কেশব
ঘরের দাওয়ায় দেখে মাতাল আকাশ তেজী মেঘ হাওয়ার সংঘর্ষে ঘনীভূত, কী
দ্রুত মিশে যেতে থাকে কলার উচ্ছ্বল ঝাড়ে
দূ..র গাঁয়ে বৃষ্টির গর্জন, শোঁ শোঁ শব্দ ...

ওই শব্দে ঘোরে ফেরে হাজার আকুতি যত স্বপ্ন সাধ :

প্রচণ্ড খরায় গেছে বৃথা ওই চৈত্র ও বৈশাখ--যাক এবার বৃষ্টিটা হলে হয়!
ক্ষুধার আদিম আয়োজনে ফুঁসে ওঠে হাতে পেশী, পায়ে শিরা
দেহে কাদাজল বিন্দু বিন্দু ঘাম, মুখে হাসি স্বস্তির নিঃশ্বাস
এবারে ফসল হবে ... কুসুমের জন্য লালপেড়ে একখান শাড়ী, আনকোরা ঘ্রাণ
নবান্নের উৎসব, ধানকাটা মাঠে যাত্রা, কবিগান, ধূয়া জারী সারী
এবারে বৃষ্টিটা হলে হয়!

দূর গাঁয়ে ততক্ষণে বৃষ্টি হয়ে গেছে।

ভারী শব্দে ওই জোর বৃষ্টি উড়ে আসে এইবার
তালবনে আধিভূত অন্ধকারে একবার ঝপ ঝপ ঝরে পড়ে
ঝাপসা করে চলে যায় গাঁয়ের ওপ্রান্ত থেকে এপ্রান্ত, এপ্রান্ত থেকে
আরো দূর প্রান্তপুর সকল সীমান্ত ছুঁয়ে ওগরানো পোড়ামাঠ
চাপ চাপ মাটি ঘাস, অগণিত আলের বিরোধ ধুয়ে যায় একবার
সে'তো শুধু একবার ... ...
তারপর উড়ে যায় দূরে, কোন অভিশপ্ত জনপদ, বিরাণ প্রান্তরে

হায় বৃষ্টি!

আবেশে উল্লাসে সারারাত ঝরে যাবে বলে
ভিজে ভিজে মাটি এই কুমারী দেহের মত কম্পিত হবে বলে
পেশল বাহুতে লাঙলের উদ্দাম উৎসব শুরু হবে বলে
মধ্যরাতে গহীন আঁধারে চেয়ে থাকা ... ...

হাওয়ায় হাওয়ায় কাপুরুষ কালো মেঘ সরে আসে
প্রতারক হাসি হেসে ওঠে চাঁদ, শুধু
শুয়ে থাকে নীচে বন্ধ্যা নারী এক এপাশ ওপাশ ফেরে।


*কবি পরিচিতি
তুষার গায়েন : কবি, প্রাবন্ধিক। আর্কিটেক্ট। জন্ম ১৯৬৭।